নতলিঙ্গ সাংবাদিকদের হজম শক্তি এবং আওয়ামী লীগের জারজ মিশন

লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ১০ জুন, ২০১৩, ১২:১২:২০ দুপুর



দিনাজপুরের এক সাংবাদিক বন্ধু হঠাৎ ফোন করে ক্ষোভের সঙ্গে বললেন সাংবাদিকতা করতে ইচ্ছা হচ্ছে না। কেন কী হয়েছে সেটা জিজ্ঞসা না করতেই তিনি বললেন, একজন এমপি সাংবাকিদের জারজ সন্তান বলে গালি দিলেও যখন তার প্রতিবাদ করতে পারিনা তখন কীভাবে এই পেশায় থাকি?

সাংবাদিক বন্ধু কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন, গত শুক্রবারে দিনাজপুরের কালিতলা প্রেসকাবে সাংবাদিকদের অভিষেক অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং বর্তমানে দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের দু’বার জারজ সন্তান বলে গালি দিয়েছেন।

বললাম নিউজ করেন নি কেন?

মনে হলো এবার তিনি কেঁদেই ফেললেন,বললেন,যার অপকর্মের নিউজ করার কারনে জারজ উপাধী কপালে জুটেছে ,তার এই কথার নিউজ করলে তো মেরেই ফেলবে। আর আমার মত সাংবাদিকদের মেরে ফেললে দেশের মানুষ তো দুরের কথা, কাক পক্ষীও কোন প্রতিবাদ করবে না। কারন আমরা তো নতজানু হতে হতে এখন নতলিঙ্গ হয়ে গেছি। একারনে সবাই বিষয়টি চেপে গেছেন। তাদের কথা, এই সরকারের সাড়ে চার বছর পার হয়েছে অথচ এখনো বেঁচে আছি ,এইতো বাপের ভাগ্য।

তখনই মনে হলো, আসলেও তো তাই,সাংবাদিক সাগর রুনীর মত প্রভাবশালী মিডিয়ার দাপুটে সাংবাদিকদের খুন করে হাড় হাড্ডি পর্যন্ত চিবিয়ে খেয়েছে তবু নতলিঙ্গ সাংবাদিকরা তার জুতসই কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি। এই খুনের ইস্যুতে কোন কোন সাংবাদিক নেতার কপাল খুলেছে,আঙ্গুল ফুলেছে,বউ বাচ্চার জৌলুস বেড়েছে। আমার দেশ বন্ধ করে দিয়ে সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর নির্যাতন হচ্ছে অথচ এই নতলিঙ্গরা কিছুই করতে পারেনি।

দিগন্ত টেলিভিশন,ইসলামী টেলিভিশন রাতের আঁধারে বন্ধ করে দিয়েছে তবু কারো লিঙ্গ চেতেনি। বরং দেশের সবচেয়ে সম্মানিত এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ১৫ জন সম্পাদক এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে শুধু বিবৃতি দেয়ার কারনে তাদের তিরস্কার করা হয়েছে। সেই দেশে ক্ষমতাসীন দলের একজন এমপি সাংবাদিকদের জারজ বললেই কার কী আসবে যাবে?

দিনাজপুরের সাংবাদিক বন্ধুটি শেষপর্যন্ত আমার কাছে পরামর্শ চাইলেন তিনি এখন কী করবেন? আমি কানে মোবাইল ধরে রেখেই নিরব হয়ে গেলাম। হঠাৎ মনে হলো, সাংবাদিকতা করতে এসে নতলিঙ্গ হয়ে গেলাম ? একবার আশংকা হলো নতলিঙ্গ হতে হতে শেষপর্যন্ত লিঙ্গটাই হারিয়ে ফেললাম না তো। মনে পড়লো,আমার এ্যাটা লিঙ্গ ছিল/লিঙ্গ গেল কই/ শরম লাগে ইরোম কথা/বলতে রাজি নই।এদিক ওদিক তাকিয়ে হাতড়ে দেখে নিশ্চিত হলাম যে এখনো লিঙ্গ হারা হইনি। লিঙ্গহারা হবার সন্দেহ এবং আশংকামুক্ত থাকতেই বিবেকের তাড়নায় ব্লগে এই পোস্ট দিতে বাধ্য হলাম।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কালিতলা প্রেসকøাবের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতির বক্ত্যবে ইকবালুর রহিম এমপি বলেছেন, আমি আপনাদের জন্য কী করিনি ? প্রেসকাবকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের চাঁদা দেই। আপনারা আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে যারা নিউজ করেছেন তারা সবাই জারজ সন্তান। তাদের জম্মের ঠিক নেই। আমি দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি। আমার বিড়াল আমাকে বলে ম্যাও !

এমপির এসব বক্তব্য শুনে সেখানে যারা অতিথি ছিলেন তারা অনুষ্ঠঅন শেষে বাইওে এসে বলেছেন সাংবাদিকদেও হজম শক্তি এতই বেশি যে তারা নিরবে জারজ গালিটি হজম কওে ফেললেন। কেউ কেউ মন্তব্য করলেন, ঐসব সাংবাদিকরা নতলিঙ্গ হওয়ায় কারণে তখন কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি । প্রাণ হজম ক্যান্ডির মত ‘জারজ’ কথাটি হজম করে ফেলেছেন উপস্থিত সাংবাদিকরা।

সাম্প্রতিক সময়ে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, হাবিপ্রবির অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ, টেন্ডারবাজি, দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে এমপি মনোনীত লোকদের নিয়োগ, বিভিন্ন স্কুল-কলেজে হস্তক্ষেপসহ নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন এমপি ইকবালুর রহিম। তার এ সমস্ত অপকর্ম দিনাজপুরের স্থানীয়, জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এসব কারনেই সাংবাদিকদেও ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে এমপি এভাবে গালিগালাজ করেন।

কথা উঠেছে কালিতলা প্রেসকাবের সভাপতি চিত্ত ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী দুলাল’র উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের জারজ বললেও তারা কোন প্রতিবাদ করেননি কেন?। বিষয়টি মনে হয়েছে কালিতলা প্রেসকাব নিজেরা অনুষ্ঠান করে এমপিকে দিয়ে জারজ সন্তানের উপাধি নিলেন। কত টাকা চাঁদা পান যে সাংবাদিকদের জারজ সন্তান বলে চেঁচিয়ে উঠলেন এমপি ইকবালুর রহিম, তার পরও কোন প্রতিবাদ করলেন না কালিতলা প্রেসকাবের সাধারন সাংবাদিকরাও ?

এ ঘটনার পর দিনাজপুরের সাংবাদিকদের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গোটা সাংবাদিক সমাজকে এমপি ইকবালুর রহিম জারজ সনÍান বলায় দিনাজপুরের তথাকথিত সাংবাদিকদের নিয়ে কালিতলা প্রেসকাব প্রতিনিধিত্বকারী চিত্ত-দুলাল গং এখন জারজ উপাধী নিয়েই বুক ফুলে ঘুওে বেড়াচ্ছেন।

সাংবাদিকদের ঐ অনুষ্ঠানে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ শামীম আল রাজী, পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্যসহ প্রেসকাবে অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজক সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন । তারা এখন জীবনের ভয়ে কেউই আর এমপির ঐ বক্তব্য সম্পর্কে মুখ খুলছেন না।

: ভালো তো,ভালো না,

যে সাংবাদিকদের জাতির বিবেক বলা হয়,তারা যখন সীমাহীন ক্ষমতাধর শাসকদের কাছে জারজ হয়ে যায়,তখন জাতির কী অবস্থা হতে পারে। আপনার কী মনে হয়?

বিষয়: বিবিধ

১৮৩১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File